ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশের ভয় দেখালে কী করবেন?

বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় : ২৬-১২-২০২৩ ০২:৫৮:২০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৬-১২-২০২৩ ০২:৫৮:২০ অপরাহ্ন
ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশের ভয় দেখালে কী করবেন? তান্ইয়া নাহারতান্ইয়া নাহার। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নানারকমের প্রযুক্তিপণ্য। এসব পণ্য ব্যবহার করে আমরা অনেক বেশি স্মার্ট হচ্ছি। বর্তমানে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এখন আমাদের  দেশের প্রায় সব বয়সের নারী-পুরুষের হাতে হাতে। ফেসবুক, টুইটার, গুগল, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম ইত্যাদি এখন আর কেবল সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসবের ব্যবহার।

বর্তমানে সাইবার অপরাধ একটি ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে পরিণত হয়েছে। মূলত ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরা ছবি সংগ্রহ করে থাকেন। এরা ভুয়া আইডি খুলে বা আইডি হ্যাক করে ছবি বা ভিডিও বা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়।

বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে নারীরাই বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। ইন্টারনেটে আপত্তিকর বা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হচ্ছেন নারীরা বেশি। দেশে বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অন্য কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া যদি তার ছবি তোলে, প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে, তাহলে এমন কাজ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অপরাধ। আর কোন ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।




আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোথায় কী শেয়ার করব, কতটুকু করব, কাদের সাথে করব, কী কী নিরাপত্তা টুল ব্যবহার করে কোনোকিছু শেয়ার বা প্রকাশ করব, সে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে সবার আগে। এখানে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে ইনবক্সে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে। এতে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকা সম্ভব। এরপরও ভয় পুরোপুরি শেষ হওয়ার নয়। কারণ যে কোন অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি যে কোন ভাবে ছবি বা ভিডিও ধারণ বা সংগ্রহ করতে পারে। বর্তমানে এআই ফটোশপ দিয়ে যে কোনো ছবিকেও আপত্তিকর ছবিতে তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সতর্কতার পাশাপাশিও আমাদের প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ।

এ ধরনের অপরাধের শিকার ভুক্তভোগী নারীরা প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের 'হ্যালো সিটি' অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসে গিয়েও সরাসরি কথা বলার সুযোগ আছে। পাশাপাশি এই ঠিকানায় ই-মেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

এর বাইরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে গিয়েও সরাসরি কথা বলতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যে কোন এলাকা থেকে [email protected] এই ঠিকানায় যে কোন ভুক্তভোগী নারী ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন। তাদের ফেসবুকে একটি পেজ আছে 'পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন' (PCSW)। এই পেজের মেসেজ অপশনে গিয়েও অভিযোগ জানানোর সুযোগ আছে।

অভিযোগ করার ক্ষেত্রে ফোনালাপের রেকর্ড, মেসেজের স্ক্রিনশট, বিভিন্ন আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল সংগ্রহে রাখা দরকার। সর্বোপরি আপনি প্রয়োজনে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারেন, যা আপনার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ায় সহায়ক হতে পারে।

কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে এই অপরাধগুলোর শিকার নারীদের একটি বড় অংশই নানান সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে অভিযোগ জানাতে অনাগ্রহী। তাদের অনেকে ভরসাও পান না যে অভিযোগ জানালে প্রতিকার পাবেন কিনা। সর্বাগ্রে এই ধরনের প্রবণতা থেকে নারীদের বের হয়ে আসা অনেক বেশি জরুরি।

লেখক: আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট,ইন্ডিফি/টিভি

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ